Saturday, August 26, 2017

আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারসমূহ



২০০৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনে পক্ষে ১৪৩ ভোট, বিপক্ষে ভোট অনুপস্থিত ১১ ভোটে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয় সাধারণ পরিষদ কর্তৃক অনুমোদনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ আড়াই দশকের কর্মপ্রচেষ্টার সফল পরিসমাপ্তি ঘটে এবং আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস আরো এক ধাপ এগিয়ে যায় আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র নিঃসন্দেহে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মাইলফলক 
এই ঘোষণাপত্রে মোট ৪৬টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। বলা যায় জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম ঘোষণাপত্র। এই ঘোষণাপত্রে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-

1.     আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার;

2.     ভূমি ও ভূখন্ডের উপর অধিকার;

3.     আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ভূমি ও ভূখন্ডের উপর সামরিক কার্যক্রম বন্ধের অধিকার;

4.     মানবিক ও বংশগত (জেনেটিক) সম্পদসহ সাংস্কৃতিক অভিপ্রকাশের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার;

5.     আদিবাসীদের ভূমি ও ভূখন্ডের উপর থেকে তাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকার;

6.     সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রথা চর্চা ও পুনরুজ্জীবিতকরণের অধিকার;

7.     মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার;

8.     নিজস্ব ভাষায় নিজস্ব সংবাদ মাধ্যম প্রতিষ্ঠার অধিকার;

9.     উন্নয়নের অধিকার প্রয়োগ করার জন্য অগ্রাধিকার তালিকা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ ও গ্রহণের অধিকার;

10.  নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ঔষধি ও স্বাস্থ্যসেবা সংরক্ষণের অধিকার;

11.  স্বাধীন ও পূর্বাবহিত পূর্বক সম্মতি ব্যতীত ছিনিয়ে নেয়া ভূমি, ভূখন্ড ও সম্পদের পুনরুদ্ধার ও ফেরত পাওয়ার অধিকার ও

12.  নিজেদের নৃতাত্বিক পরিচয়, উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করার অধিকার ইত্যাদি।

আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের অবস্থান


সাধারণ পরিষদে ভোট, পক্ষে, বিপক্ষে, ভোট দানে বিরত কিংবা অনুপস্থিত দেশসমূহ এবং বাংলাদেশের অবস্থান

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনে পক্ষে ১৪৩ ভোট, বিপক্ষে ৪ ভোট ও অনুপস্থিত ১১ ভোটে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক এই ঘোষণাপত্র চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। নিম্নে সদস্য রাস্ট্রগুলোর অবস্থান তুলে ধরা হলো-

পক্ষে ভোটঃ আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, আনদোরা, এঙ্গোলা, এ্যানটিগুয়া ও বারমুদা, আর্জেনটিনা, আরমেনিয়া, অস্ট্রিয়া, বাহামাস, বাহরাইন, বার্বাদোস, বেলারুশ, বেলজিয়াম, বেলাইস, বেনিন, বলিভিয়া, বসনিয় ও হারজেগোবিনা, বটসোয়ানা, ব্রাজিল, ব্রুনেই দারুসসালাম, বুলগেরিয়া, বুরকিনা, ফাসো, কম্বেডিয়া, ক্যামেরুন, কেপ ভার্দে, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, ডেনমার্ক, যিবুটি, ডোমিনিকা, ডোমিনিকান রিপাবলিক, ইকুয়েডর, মিশর, এল সালভাদর, এসটোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গাবোন, জার্মানী, ঘানা, গ্রীস, গুয়েতামালা, গিনি, গায়েনা, হাইতি, হুন্ডোরাস, হাঙ্গেরী, আইসল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, আয়ারল্যান্ড, ইতালী, জ্যামাইকা, জাপান, জর্দান, কাজাকস্তান, কুয়েত, লাওস, লাটভিয়া, লেবানন, লেসোথো, লাইবেরিয়া, লিবিয়া, লাইষ্টেনটেইন, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাদাগাস্কার, মালাবি, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মালটা, মোরিসাস, মেক্সিকো, মাইক্রোনেশিয়া, মালদোভা, মোনাকো, মঙ্গোলীয়া, মোজাম্বিক, মায়ানমার, নামিবিয়া, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, নিকারাগুয়া, নিগার, নরওয়ে, ওমান, পাকিস্তা, পানামা, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, কাতার, প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, ও গ্রানাদাইসন, সান মারিনো, সৌদি আরব, সেনেগাল, সার্বিয়া, সিয়েরালিওন, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, শ্রীলংকা, সুদান, সুরিনাম, সোয়াজিল্যান্ড, সুইডেন, সুইজার‌ল্যান্ড, সিরিয়া, থাইল্যান্ড, যুগোস্লাভিয়া, তিমুর-লিসতে, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তিউনিশিয়া, তুর্কি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত তানজানিয়া, উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।

বিপক্ষে ভোটঃ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ভোট দানে বিরতঃ আজারবাইজান, বাংলাদেশ, ভূটান, বুরুন্ডি, কলম্বিয়া, জর্জিয়া, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, রাশিয়া, সামোয়া, ও ইউক্রেন।

অনুপস্থিতঃ চাদ, কোটে ডি’আইলোরে, ইকোটোয়াল গিনি, ইরিট্রিয়া, ইথিওপিয়া, ফিজি, গাম্বিয়া, গ্রানাডা, গিনি-বিসাউ, ইসরাইল, কিরিবাতি, কিরগিস্তান, মারশাল আইল্যান্ড, মৌরিতানিয়া, মন্টিনেগ্রো, মরক্কো, নৌরু, পালাউ, পাপুয়া নিউ গিনি, রোমানিয়া, রোয়ান্ডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সাও টোমে ও ট্রিনসিপে, সিসিলিজ, সোলোমোন আইল্যান্ড, সোমালিয়া, তাজিকিস্তান, টোকো, টঙ্গো, তুর্কিমেনিস্তান, ‍তুভালু, উগান্ডা, উজবেকিস্তান, ও ভানুতু।

পরবর্তীতে মন্টিনিগ্রো এবং অস্ট্রেলিয়া সমর্থন ভোট প্রদান করে। এর ফলে পক্ষে ভোট দাঁড়ায় ১৪৫টি।

বাংলাদেশের অবস্থান ও কারণ ব্যাখ্যাঃ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রের উপর ভোট গ্রহণের সময় বাংলাদেশ ভোট দানে বিরত থাকে। অনুমোদনের পর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি ইশরাত জাহান আহমেদ বলেন যে, তাঁর মিশন যে কোন অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের প্রতি সমর্থন করে। বাংলাদেশ প্রধান প্রধান সকল মানবাধিকার চুক্তির প্রতি অনুগত রয়েছে এবং আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার সমর্থন করে। কিন্তু এই ঘোষণাপত্রে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে, বিশেষ করে ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী’ সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়িনি বা সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি। অধিকন্তু ঘোষণাপত্রের উপর সকল সদস্য-রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বসম্মত সমর্থন নেই। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ ভোট দানে বিরত থাকে বলে তিনি জানান। 

আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের পটভূমি

আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের পূর্বকথা


ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক যুগ থেকে ৭০টি দেশে বসবাসকারী প্রায় ৪০ কোটি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর উপর চলমান শতাব্দী ব্যাপী বৈষম্য জাতিগত আগ্রাসন জাতিসংঘ স্বীকার করেছে ১৯২৩ সালে কানাডার হৌদেনসোনি প্রধান দেসকাহেহ্ সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে সফর করেন তৎকালীন জাতিপুঞ্জের কথা বলার জন্য এবং তাঁর স্বজাতির লোকেরা যাতে তাদের আইনানুসারে, তাদের নিজস্ব আবাসভূমিতে এবং তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী বসবাস করতে পারে সেই অধিকারের কথা তুলে ধরতে কিন্তু তাঁকে জাতিপুঞ্জে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি এমনকি তাঁকে ১৯২৪ সালে তাঁর দেশে (আবাসভূমিতে) ফিরতেও দেয়া হয় নি যদিও তিনি সেসময় জাতিপুঞ্জে কথা বলতে পারেনি, কিন্তু তাঁর সেই লক্ষ্য স্বপ্ন পরবর্তী প্রজন্মকে প্রবলভাবে উজ্জীবিত করেছিল যা আজো অনুপ্রাণিত করে চলেছে

১৯৭০ সালে জাতিসংঘের সংখ্যালঘু রক্ষা বৈষম্য প্রতিরোধ সংক্রান্ত উপ-কমিশন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার মৌলিক স্বাধীনতা সংক্রান্ত পরিস্থিতির উপর এক সামগ্রিক পর্যালোচনা শুরু করার সুপারিশ গ্রহণ করে উক্ত সুপারিশ অনুসারে ১৯৭১ সালে মি. হোজে মার্টিনেজ কোবোকে বিষয়ে গবেষণার দায়িত্ব দেয়া হয় তিনি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে গবেষণার পরআদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের সমস্যাবলীর গবেষণাকর্মশিরোনামে ২২টি অধ্যায় বিশিষ্ট ১৪০০ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করেন উক্ত প্রতিবেদনে যে সকল সুপারিশ গ্রহণ করা হয় তন্মধ্যে অন্যতম ছিল আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার সম্বলিত একটি আন্তর্জাতিক ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা

উক্ত সুপারিশমূলেসংখ্যালঘু রক্ষা বৈষম্য প্রতিরোধ সংক্রান্ত উপ-কমিটি’ (পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করেমানবাধিকার বিষয়ক উপ-কমিশনকরা হয়) কর্তৃক সদস্য বিশিষ্ট একটিআদিবাসী জনগোষ্ঠী বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ১৯৮২ সালে স্থাপন করে মি. হোজে মার্টিনেজ কোবো পর্যবেক্ষণ সুপারিশমালা অনুসারে উক্ত ওয়ার্কিং গ্রুপে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার মৌলিক স্বাধীনতা সংক্রান্ত পরিস্থিতির উপর এক ঐতিহাসিক পর্যালোচনা শুরু করে

জাতিংঘের সদস্য রাষ্ট্র আদিবাসী প্রতিনিধিদের মধ্যে ১৯৮৫ হতে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত আলোচনা-পর্যালোচনার উক্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ কর্তৃক ৪৬টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র’-এর একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয় এবং তা ১৯৯৪ সালে মানবাধিকার উপ-কমিশনে পেশ করা হয় উপ-কমিশনে উক্ত খসড়া ঘোষণাপত্রে অনুমোদনপূর্বক মানবাধিকার কমিশনে প্রেরণ করে

ইতিমধ্যেই জাতিংঘ ১৯৯৩ সালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী বর্ষ এবং ৯ই আগষ্টকে আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে অপরদিকে ১৯৯৩ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯৫-২০০৪ সালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দশক হিসেবে ঘোষণা করে উক্ত দশকের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল ঘোষিত দশকের মধ্যেআদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রচূড়ান্ত করা তারই ধারাবাহিকতায় উক্ত খসড়া ঘোষণাপত্রের বিস্তৃত দফাওয়ারী পরীক্ষা-নিরীক্ষার  লক্ষ্যে মানবাধিকার কমিশন ১৯৯৫ সালেআদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপস্থাপন করে

১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত উক্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রত্যেক বছর আদিবাসী জনগোষ্ঠী এনজিও প্রতিনিধিদের মতামত গ্রহণসহ ঘোষণাপত্র পর্যালোচনার নিয়মিত অধিবেশন বসে, কিন্তু খসড়া ঘোষণাপত্রের চূড়ান্তকরণের নিমিত্তে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণে উক্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ ব্যর্থ হয় সর্বসম্মত ঐক্যমত্যে উপনীত না হওয়ার পেছনে মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, আদিবাসীদের ‘Peoples’ হিসেবে আখ্যায়িত করা, ভূমি প্রাকৃতিক সম্পদের উপর আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সমষ্টিগত অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে মতানৈক্য

২০০৫ সালের ২০ এপ্রিল মানবাধিকার কমিশনআদিবাসী জনগোষ্ঠী বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপএবংআদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপএই দুটি ওয়ার্কিং গ্রুপের কাজ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এমতাবস্থায় ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসেআদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ’-এর চেয়ারম্যান লুইস এনরিক চেভেজ (পেরু নাগরিক) খসড়া ঘোষণাপত্রের বিতর্কিত অনুচ্ছেদগুলো সংশোধনপূর্বক মতৈক্যমূলক শব্দ সন্নিবেশ করে মানবাধিকার কমিশনে পেশ করে

এরপর ২৯ জুন ২০০৬ সালেমানবাধিকার কমিশন’-এর পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিতমানবাধিকার পরিষদইহার উদ্বোধনী অধিবেশনে পক্ষে ৩০ ভোট, বিপক্ষে ভোট অনুপস্থিত ১২ ভোটে উক্ত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে এবং সাথে সাথে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরবর্তী অধিবেশনে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করে ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর উক্ত খসড়া ঘোষণাপত্র সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে প্রেরণ করা হয় কিন্তু আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে নামিবিয়া উক্ত ঘোষণাপত্রের উপর সাধারণ পরিষদের ভোট গ্রহণ পিছিয়ে নেয়ার প্রস্তাব পেশ করে পক্ষে ৮২ ভোট, বিপক্ষে ৬৭ ভোট অনুপস্থিত ২৪ ভোটে এই কমিটি উক্ত প্রস্তাব অনুমোদন করে এবং এর ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদও তৃতীয় কমিটির প্রস্তাবানুসারে খসড়া ঘোষণাপত্রের উপর ভোট গ্রহণ স্থগিত করে এর ফলে সাধারণ পরিষদের ভোট গ্রহণ পরবর্তী ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যায়

অবশেষে ২০০৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনে পক্ষে ১৪৩ ভোট, বিপক্ষে ভোট অনুপস্থিত ১১ ভোটে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক এই ঘোষণাপত্র চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয় সাধারণ পরিষদ কর্তৃক অনুমোদনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ আড়াই দশকের কর্মপ্রচেষ্টার সফল পরিসমাপ্তি ঘটে এবং আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস আরো এক ধাপ এগিয়ে যায় আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র নিঃসন্দেহে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মাইলফলক 

আদিবাসী, ভূমি ও জীবন

আদিবাসীদের কাছে ভূমিই জীবন, ভূমিই অস্তিত্ব। আদিবাসীদের ভূমি অধিকার কিছু বলার আগে, সম্পদ, ভূমি, বন, প্রাণী জগত, ধরিত্রী ও অধিকার সম্পর্কে আদ...