Saturday, February 15, 2014

বানিজ্যিক ভালোবাসা ও ভালোবাসা দিবস

                                                                         -সন্তোষ ডি. কারগিল

ভালোবাসা এক ধরনের সহজাত মানবীয় গুণ। জন্মগতভাবে মানুষ এ গুণাবলী অর্জন, লালন ও ধারণ করে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়, ভালোবাসার গুণাবলী অর্জনে তেমন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। ভালোবাসার বিশ্বখ্যাত আইকনরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভালোবাসা শেখেননি। লায়লী-মজনু, শিরী-ফরহাদ, ইউসুফ-জুলেখা বা রোমিও-জুলিয়েটকে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রশিক্ষণ একাডেমিতে গিয়ে ভালোবাসা শিখতে হয়নি। কাজেই অনুষ্ঠান করে নিজেকে অধিক ভালোবাসা-সমৃদ্ধ করা যায় মনে করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। সৃষ্টির আদিকাল থেকে ভালোবাসা পৃথিবীর সব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সহজাতভাবে সক্রিয় ও প্রবাহমান রয়েছে। নাচ-গান বা অভিনয় শেখানোর মতো ভালোবাসা শেখানোর জন্য প্রতিষ্ঠান বা প্রশিক্ষণ একাডেমি গড়ে ওঠেনি।

প্রায় সোয়া যুগ হল বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সীমিত আকারে এ দিবসটির পালন শুরু হয়েছে।যদিও মিডিয়ার কল্যাণে সারাদেশে এর প্রচারলাভ করছে,তবে এ দিবসটি এখনো শহুরে সমাজের মধ্যেই বিরাজমান। তবে, একদিন ভালোবাসা দিবস পালন করে ভালোবাসাকে উপলব্ধি করা যায় না। ভালোবাসা মন থেকে আসতে হয় দিবস পালনের মাধ্যমে নয়।যারা ভালোবাসা দিবস পালন করে না তাদের কি ভালবাসা কম? পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ভালোবাসা দিবস পালন করে ওইসব দেশের নাগরিকরা অধিক ভালোবাসাপ্রবণ হতে পেরেছেন মনে করলে ভুল হবে। স্মর্তব্য, এ উপমহাদেশে যখন ভালোবাসা দিবস পালিত হতো না, তখন এ অঞ্চলের দেশগুলোতে ভালোবাসার মোটেও ঘাটতি ছিল না। অসুস্থ মায়ের চিঠি পেয়ে মায়ের ভালোবাসার টানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিপজ্জনক জেনেও বর্ষার খরস্রোতা নদী সাঁতরে মাকে দেখতে গিয়েছিলেন। শত শত বছর আগে থেকে ভালোবাসা দিবস পালনকারী ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিকরা তাদের মাকে আমাদের মতোই গভীরভাবে ভালোবাসলেও মায়ের ভালোবাসার টানে তাদের কারও টেমস বা মিসিসিপি নদী সাঁতার কেটে পার হওয়ার ঘটনা আমাদের জানা নেই।

ভালোবাসা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ভালোবাসার বিস্তারিত পরিধি ও এর বহুমাত্রিকতাকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। স্মরণ রাখা ভালো, আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিটি সম্পর্কই ভালোবাসার উষ্ণতা ও শক্তির ওপর টিকে আছে। ভালোবাসায় ফাটল ধরলে এসব সম্পর্ক ধরে রাখা যায় না। মায়ের সঙ্গে সন্তানের, পিতার সঙ্গে পুত্রের, স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর, ভাইয়ের সঙ্গে বোনের, প্রেমিকের সঙ্গে প্রেমিকার, শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রের, গুরুর সঙ্গে শিষ্যের, আদর্শের সঙ্গে বিপ্লবীর, শিল্পের সঙ্গে শিল্পীর, ধর্মের সঙ্গে ধার্মিকের, ফুল বাগানের সঙ্গে মালীর, শিল্পকর্মের সঙ্গে শিল্পীর- এমন সব সামাজিক সম্পর্কই ভালোবাসার বন্ধনে অটুট হয়ে আছে। ভালোবাসার উষ্ণতাই এসব সম্পর্ককে সজীব ও প্রাণবন্ত করে রেখেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, যারা ভালোবাসা দিবস পালন করছেন, বিশেষত তরুণ-তরুণীরা, তারা তাদের ভালোবাসাকে ভ্যালেন্টাইন ডে-তে কেবল ভ্যালেন্টাইন কার্ড ও পুষ্প বিনিময়ের মধ্যে সীমিত করে ফেলেছে। ভালোবাসা দিবসের অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণকারী বয়স্করাও তাদের যুব বয়সের প্রেম-ভালোবাসার আবেগপ্রবণ রসালো গল্পের স্মৃতিচারণ করছেন।বাবা মা, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদির স্মৃতিচারণ কমই শোনা যায়।

এ ভালোবাসা দিবস পালনকারী মানুষগুলো এবং দেশগুলো যদি সত্যি সত্যি ভালোবাসার চর্চা করত তাহলে কি পৃথিবীর চেহারা আরও প্রাণময় হয়ে উঠত না? নীতি, কৌশলগুলো যদি তৃতীয় বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র দেশগুলোর দিকে পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলো একটুখানি ভালোবাসার দৃষ্টিতে সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাহলে গরিব-দুঃখী মানুষের জীবন কিছুটা হলেও স্বস্তিময় হতে উঠত। বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যদি তুলনামূলকভাবে দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতি শোষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন করার চিন্তা থেকে বেরিয়ে ভালোবাসার দৃষ্টি দিয়ে ওই দেশগুলোকে স্বচ্ছল হতে সহযোগিতা করত, তাহলে পৃথিবীর আঞ্চলিক উন্নয়ন বৈষম্য অনেকটাই হ্রাস পেত।

উন্নত দেশগুলোর ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভালোবাসা দিবস পালনকারী শিক্ষিত সুশীল সমাজের মানুষদের এসব বিষয়ে নতুন করে ভাবা প্রয়োজন। তাদের উচিত ভালোবাসাকে বিশ্ব মানবতার জন্য কল্যাণকারী টনিক হিসেবে কার্যকর ও প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন পরিকল্পনা ও গঠনমূলক আঙ্গিকে ভালোবাসা দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠান সাজানো।বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসকে একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত করতে হলে এ দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজকদের উন্নত দেশগুলোর আদলে আলোচ্য দিবস পালন না করে স্বদেশী বাস্তবতা ও গণমানুষের সংস্কৃতি বিবেচনায় নিয়ে এ দিবস পালনের আয়োজন পরিকল্পনা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রেম-ভালোবাসার স্মৃতিজাগানিয়া গল্প আর পারস্পরিক উপহার ও পুষ্প বিনিময়ের মধ্যে ভালোবাসা দিবসের অনুষ্ঠান সীমিত না রেখে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষকে এ অনুষ্ঠানে আকৃষ্ট করতে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে বাংলাদেশের অসুস্থ রাজনীতি ও রুগ্ণ গণতন্ত্রের উন্নয়নে ভালোবাসার শক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। এ দেশের রাজনীতিতে যেহেতু পরশ্রীকাতরতা ও প্রতিহিংসা খুবই সক্রিয়, সে কারণে এহেন রাজনীতিকে সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে ভালোবাসার উষ্ণতাকে ব্যবহার করতে অসুবিধা কোথায়? কেবল তরুণ-তরুণীদের চলমান বাক-বাকুম প্রেমে উষ্ণতা সঞ্চারের উদ্যোগ না নিয়ে এ দিবসটি যদি অনুষ্ঠানের আয়োজকরা দেশের দুই প্রধান নেতাকে অতিথি করে তাদের মধ্যে পুষ্প বিনিময় করাতে পারতেন তাহলে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিহিংসার মাত্রা কমানো সম্ভব হতো। শুধু তাই নয়, ভালোবাসা দিবস উদযাপনে এমন উদাহরণ সৃষ্টি করা উচিত,যার মধ্য দিয়ে মানুষ পারিবারিক, সামাজিক সব ক্ষেত্রে ভালোবাসার উষ্ণতা সত্যি সত্যি ছড়িয়ে পড়ে এবং ভালোবাসার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জাতি, ধর্ম, শ্রেণী, বর্ণ নির্বশেষে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠণে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের বঞ্চিত, নিপীড়ত জাতি গোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভালোবাসা দিবস এক গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এভাবে শোষণমুক্ত এবং সারা বিশ্ব এক সমাজে রুপান্তরিত হতে পারে।

Sources: http://smritee-dhamai.blogspot.com/2014/02/blog-post_14.html
ভ্যালেন্টাইন ডে ও আমরা                             
                                        -সন্তোষ ডি. কারগিল

 
অতি সম্প্রতি আমাদের দেশীয় সমাজে খুব ঘটা করে ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালবাসা দিবস পালন করার উৎসাহ এবং উদ্দীপনা খুব যত্ন সহকারে লক্ষ করছি। আসুন আমরা ভ্যালেন্টাইন ডে সম্পর্কে ইতিহাসে কি আছে সেটা একটু ঘুরে আসি।

The new Encyclopedia Britannica
এবং Encyclopedia Americana সহ আরো অনেক গ্রন্থে জানা যায়রোমান এক খ্রিস্টান পাদ্রী নাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইন, চিকিৎসা বিদ্যায় ছিল অভিজ্ঞ। খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারের অভিযোগে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসে আদেশে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। সে যখন বন্দী ছিল তখন তরুন-তরুনীরা তাকে ভালোবাসা জানিয়ে জেলখানার জানালা দিয়ে চিঠি ছুড়ে দিত। বন্দী অবস্থাতেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন জেলারের অন্ধ মেয়ের চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়ার চিকিৎসা করে। এসময় মেয়েটির সাথে তার হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মৃত্যুর আগে মেয়েটিকে লেখা এক চিঠিতে সে লিখে- " from your Valentine" অনেকের মতে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নাম অনুসারেই পোপ প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে "সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে" হিসেবে ঘোষণা দেয়।
আরো একজন ভ্যালেন্টাইনের নাম পাওয়া যায় ইতিহাসে। রোমান সম্রাট ক্লাডিয়াস যুদ্ধের জন্য ভালো সৈন্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যুবকদের বিয়ে করতে নিষেধ করে। কিন্তু সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নিয়ম ভঙ্গ করে প্রেম করে, পরে আইন ভেঙ্গে বিয়ে করে। ফলে তাদের মৃত্যুদন্ড হয়।
মূলত এরও বহু আগে থেকে রোমানদের দুটি প্রথা বা অনুষ্ঠান চালু ছিলো। . প্রেম এবং বিয়ে।
. পুরুষের পুরুষত্ব মেয়েদের মেয়েলীত্ব ক্ষমতা বিষয়ে উৎসব।
লুপারকালিয়া এসব উৎসবের অন্যতম। এই অনুষ্ঠান হতো ১৫ ফেব্রুয়ারি। এর আগের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি তরুন-তরুনীরা লটারীর মাধ্যমে নাচের পার্টনার নির্বাচন করতো। ৪০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে দুই দিনের পরিবর্তে একদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। অনেকে মনে করতো, ১৪ ফেব্রুয়ারি পাখিরা তাদের সঙ্গী বেছে নেয়। এদিনটা পালনের ক্ষেত্রে রোমানরা লটারী করে তাদের পছন্দনীয় পুরুষ এবং মহিলা নির্বাচন করতো। ১৭০০ সালের দিকে ইংরেজ রমনীরা কাগজে তাদের পরিচিত পুরুষদের নাম লিখে পানিতে ছুড়ে মারত কাদামাটি মিশিয়ে। যার নাম প্রথমে ভেসে উঠতো সেই হতো প্রকৃত প্রেমিক।
ষোড়শ শতাব্দীর থেকে কাগজের কার্ড বিনিময় শুরু হয়। ১৮০০ সাল থেকে তামার প্লেটে একই ডিজাইনের অনেক কার্ড ছাপা হয়। এভাবেই তথাকথিত ভালোবাসা দিবস ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।
১৯৯৩ সালে যায়যায়দিন-এর মাধ্যমে শফিক রেহমানের হাত ধরে ভ্যালেন্টাইন ডে এর আগমন বলে অনুমান করা যায় তবে দিবসটির আনুষ্ঠানিক ব্যাপ্তি লাভ করে প্রায় অর্ধদশক এর মধ্যে

 

আদিবাসী, ভূমি ও জীবন

আদিবাসীদের কাছে ভূমিই জীবন, ভূমিই অস্তিত্ব। আদিবাসীদের ভূমি অধিকার কিছু বলার আগে, সম্পদ, ভূমি, বন, প্রাণী জগত, ধরিত্রী ও অধিকার সম্পর্কে আদ...